মৃত্যু নিবন্ধন কি
মৃত্যু নিবন্ধন হলো মৃত ব্যক্তির নাম, মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান, লিঙ্গ, পিতা বা মাতা বা স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃকখাতায়/রেজিস্টারে লেখা এবং মৃত্যু সনদ প্রদান করা।
মৃত্যু নিবন্ধন কি কাজে লাগে
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি প্রভৃতি কাজেরজন্য মৃত্যু নিবন্ধন প্রয়োজন। তদুপরি মৃত্যু নিবন্ধিত না হলে দেশের প্রকৃতজনসংখ্যা নির্ণয় সম্ভব হবে না। মৃত্যু নিবন্ধন করতে হলে মৃত ব্যক্তিরজন্ম নিবন্ধন থাকতে হবে। জন্ম নিবন্ধন করা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সম্পাদনেরপর মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনেফিস-এর হার
| ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায় | সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
দুই বছরের উর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের জন্ম নিবন্ধন | ৫.০০ প্রতি বছর | ১০.০০ প্রতি বছর | |||||
দুই বৎসর বয়সের নিচে ব্যক্তিদের জন্ম নিবন্ধন | শূন্য | শূন্য | |||||
কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধন | শূন্য | শূন্য | |||||
জন্ম বা মৃত্যুসনদের মূল বাংলা বা ইংরেজী কপি সরবরাহ | শূন্য | শূন্য | |||||
জন্ম বা মৃত্যুসনদের বাংলা বা ইংরেজী দ্বি-নকল কপি সরবরাহ | ২৫.০০টাকা | ২৫.০০ টাকা | |||||
সরবরাহকৃততথ্যের ভিত্তিতে প্রদত্ত নিবন্ধন সনদে কোন ভুল বা গরমিল পরিলক্ষিত হলেনিবন্ধন সনদ এবং, ক্ষেত্রমত, নিবন্ধন বহি সংশোধন
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন আমাদের সবার জন্য খুব দরকারি বিষয়। বিশেষ করে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে হলে এবং সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা গড়ে তোলার জন্য জন্ম নিবন্ধন খুব প্রয়োজন। ব্যাখ্যা: ১ আনোয়ার : জন্ম মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য কারা নিবন্ধক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : বিভিন্ন জায়গায় জন্ম নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন মানুষ রয়েছেন। যেমন : · সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তিনি যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন সেই কর্মকর্তা বা কমিশনার। · পৌরসভা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য পৌরসভার চেয়ারম্যান বা প্রশাসক বা তিনি যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন সেই কর্মকর্তা বা কমিশনার। · ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন সেই কর্মকর্তা বা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। · ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী, মৃত্যুবরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তিনি যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন সেই কর্মকর্তা। · বিদেশে জন্মগ্রহণকারী ও মৃত্যুবরণকারী কোন বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা তিনি যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন সেই কর্মকর্তা । আনোয়ার : জন্ম মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য কারা নিবন্ধকের কাছে তথ্য পাঠাতে পারেন? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : জন্ম মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য নিচের ব্যক্তিরা নিবন্ধকের কাছে তথ্য পাঠাতে পারেন- · ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সচিব · গ্রাম পুলিশ · সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কমিশনার · ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণ কর্মী · স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী · কোন সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা · কোন গোরস্থান বা শ্মশান ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক (যিনি গোরস্থান বা শ্মশান ঘাট দেখাশুনা করেন) · নিবন্ধক নিয়োজিত করেছেন এমন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী · জেলখানায় জন্ম-মৃত্যুর ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ব্যক্তি · পরিত্যক্ত শিশু বা সাধারণ স্থানে থাকা পরিচয়হীণ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং · নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। নাহার : নিবন্ধকের দায়িত্ব কি ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক নিচের দায়িত্ব পালন করবেন। যথা: · সকল ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন যাতে হয় সে ব্যবস্থা করা · নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং ফরম, রেজিষ্টার ও সনদ সংগ্রহ অথবা ছাপানো · নিবন্ধন সংক্রান্ত নথিপত্র বা নিবন্ধন বই সংরক্ষণ করা · জন্ম ও মৃত্যু সনদ সরবরাহ করা · বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন দায়িত্ব পালন করা। আনোয়ার : কিভাবে জন্ম নিবন্ধন করা যায় ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর পিতা-মাতা, অভিভাবক বা নির্ধারিত অন্যকোন ব্যক্তি শিশুর জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধককে দিবেন। মনে রাখা দরকার, শিশু নিবন্ধনের আগেই শিশুর নাম ঠিক করতে হবে। শিশুর নাম ঠিক না হলে নিবন্ধনের ৪৫ দিনের মধ্যে নাম ঠিক করে নিবন্ধকের কাছে দিতে হবে। আনোয়ার : দেরিতে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম কি ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : দেরিতে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত বিলম্ব ফি দিতে হবে। শিশু যে এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেছে সেই এলাকায় তার জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। আনোয়ার : কিভাবে মৃত্যু নিবন্ধন করা যায় ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : কোন ব্যক্তি মারা গেলে মারা যাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ঐ ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামী, পুত্র, কন্যা, অভিভাবক বা অন্য কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবরটি নিবন্ধককে জানাবেন। এক্ষেত্রেও দেরিতে বিলম্ব নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। আনোয়ার : কোন কোন জায়গায় জন্ম সনদের প্রয়োজন হয় ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : কোন ব্যক্তির বয়স, জন্ম, মৃত্যু প্রমাণের ক্ষেত্রে কোন অফিস বা আদালতে বা স্কুল-কলেজে বা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জন্ম বা মৃত্যু সনদ একটা দলিল হিসেবে কাজ করে। অন্য কোন আইনে যাই থাক না কেন নিচের বিষয়ে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক- · পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে; · বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে; · শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির (ভর্তিকালীন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান সম্ভব না হলে ৪৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে) ক্ষেত্রে; · সরকারী-বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে; · ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে; · ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে; · জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে; · বিধিদ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন ক্ষেত্রে। নাহার : জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন না করলে কি শাস্তি হতে পারে ? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য : জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন না করলে আইন অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে। ব্যাখ্যা:২ এরপর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের সহায়তায় নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আনোয়ার ও নাহার তাদের মেয়ে মৌটুসীর জন্ম নিবন্ধন করায়। জন্ম নিবন্ধন ফর্মটি স্কুলে ভর্তির ৪৫ দিনের মধ্যে জমা দিয়ে তারা মৌটুসীকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারে। শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সব ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র অত্যন্ত জরুরী। তাই প্রত্যেকটি শিশুর জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন এবং মৃত্যুর পর মৃত্যু নিবন্ধন করা প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব। সচরাচর জিজ্ঞাসা প্রশ্ন.১. জন্ম নিবন্ধনের সুফলগুলো কি কি? উত্তর. · জন্ম নিবন্ধিত হলে বয়স নির্ধারণ সঠিক হয় এবং প্রতিটি ব্যক্তির পরিচয় লিপিবদ্ধ থাকে। · বাল্যবিবাহ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। · ভোটার তালিকা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি জালিয়াতি বন্ধ করা সম্ভব। · জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধিত হলে জনসংখ্যা শুমারীতে সুবিধা হয়। প্রশ্ন.২. জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কোথায় করতে হবে? উত্তর. প্রথমত: যে এলাকায় শিশু জন্ম গ্রহণ করবে এবং কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার শেষকৃত্য বা দাফন কার্য সম্পাদন করা হয় সেই এলাকায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে। প্রশ্ন.৩.জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন না করলে তার শাস্তি কি? উত্তর. জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন না করলে তার শাস্তি ৫০০ টাকা জরিমানা বা দুই মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা উভয়দন্ড। তথ্যসূত্র 1.জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন,২০০৪। 2.জন্ম নিবন্ধন, বাল্যবিবাহ, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, প্রকাশক-জেন্ডার এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট কমিউনিকেশন সেন্টার, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট।
ছবির স্বত্ত্ব 1.বারসিক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন : ব্যাখ্যা
|
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস